ঢাকার ধামরাইয়ে এক যুবকের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে । পরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। তিনি এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
রোববার (১০ মার্চ) বিকেলে ঘটনাটি জানাজানি হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ধামরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অসীম বিশ্বাস মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, মারধরে হাশেম আলীর (৩৯) পা ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে। তিনি নড়াচড়া করতে পারছেন না। এমনকি শুয়ে বসেও থাকতে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে তার। আহত হাশেম কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা গ্রামের মৃত গোলাম আলীর ছেলে।অভিযুক্তরা হলেন, কুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, তার দুই ছেলে মো. মমিন (২৭) ও মো. রিপন আলী (৩০), কুল্লা ইউপি সদস্য মো. বোরহান উদ্দিন (৪৫) ও বাসিন্দা মো. আ. হকসহ অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘উঠানের পাকা জায়গায় হাশেমকে ফেলে চেয়ারম্যান পা দিয়ে মুখ চেপে ধরেন। তার ছেলেরা হাশেমকে রশি দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধেন। এরপর আরও কয়জন মিলে মারধর করেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির জায়গা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফরের সঙ্গে হাশেমদের বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিবাদেও জড়িয়েছেন তারা। এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িসংলগ্ন স্থানীয় আবদুল বারেকের পাঁচতলা ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি করছেন হাশেম আলী। মঙ্গলবার রাতে বারেকের ছেলে হারিজুল ইসলাম কাজের জন্য হাশেমকে এক লাখ টাকা বিল দেন। ওই বিল নিয়ে হাশেম বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে আনোয়ার হোসেন নামের একজনের বাড়িতে চুরির চেষ্টার অপবাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যান।আহত হাশেমের বড় ভাই জাহের আলী বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে নিজ কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে এলে চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা আমার ভাইয়ের গতিরোধ করে। তারপর লুৎফর রহমানের বাড়িতে জোর করে ধরে নিয়ে গেট আটকে দেয়। খবর শুনে আমার বড় ভাই মো. আ. আলীম লুৎফর রহমানের বাসার গেটের সামনে গিয়ে গেট খোলার জন্য আকুতি করেন। গেট না খুললে আমার ভাই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল করে পুলিশের সহযোগিতা চান। আধা ঘণ্টা পর পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে আমার ভাইকে চিকিৎসার জন্য ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।তিনি বলেন, শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে আমরা থানায় গিয়ে ওসিকে বিষয়টি জানালে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, ‘এক বাড়িতে চুরি করতে গেলে স্থানীয়রা তাকে ধাওয়া দিয়ে আটক করে মারধর করে। পরে চৌকিদার তাকে আমার কাছে নিয়ে আসে। ওসিকে বিষয়টি জানাই। পুলিশ এসে তাকে হেফাজতে নেয়। আমার বাসায় তাকে মারধরের অভিযোগটি সত্য নয়।’
ধামরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অসীম বিশ্বাস বলেন, ‘৯৯৯–এর মাধ্যমে জানতে পারি, চেয়ারম্যানের বাড়িতে চোর সন্দেহে একজনকে মারধর করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর চেয়ারম্যান দাবি করেন, এলাকাবাসী হাশেমকে চোর হিসেবে মারধর করেছে। পরে দ্রুত ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি।’