ইফতারের অন্যতম উপকরণ খেজুরের দাম সরকার বেঁধে দিলেও মানছে না ব্যবসায়ীরা। দেশে আমদানিকৃত বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানিমূল্য, আরোপিত শুল্ক ও কর এবং আমদানিকারকের অন্য খরচ বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সোমবার (১১ মার্চ) প্রতিকেজি খেজুরের মানভিত্তিক যৌক্তিক মূল্য নিরূপণ করেছে।মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে বলা হয়েছে, অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা।
বুধবার (১৩ মার্চ) বাজার ঘুরে দেখা গেল ভিন্নচিত্র। রাজধানীর সদরঘাট, বাদামতলী, গুলিস্তান ও কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি জাইদি খেজুর ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের সরকার নির্ধারিত দাম সর্বোচ্চ ১৬৫ টাকা। কিন্তু এসব খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার আশপাশে।
গুলিস্তানে খেজুর কিনতে গিয়ে কামাল হোসেন নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে খেজুর গত বছর কিনেছিলাম ৫০০ টাকায়, সেটা চাইতেছে ৯০০ টাকা। পছন্দও হচ্ছিল না। পরে বাধ্য হয়ে ১২০০ টাকা কেজি খেজুরের ২০০ গ্রাম কিনলাম।’
বাদামতলীর ফল বাজারের খুচরা খেজুর বিক্রেতা নজরুল জানান, রোজা শুরু হওয়ার অন্তত সপ্তাহখানেক আগে থেকে বাজারে এই দুই ধরনের খেজুর মোটামুটি এমন দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ার বিষয়ে এ ব্যবসায়ী বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে তারা যে খেজুর কিনেছেন, তার দাম বাড়তি ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার খুচরা বাজারের জন্য যে দাম বেঁধে দিয়েছে, পাইকারি বাজারেই তার কাছাকাছি দামে তাদেরকে খেজুর কিনতে হয়েছে।
ফলে সরকারের নির্ধারিত দামে খেজুর বিক্রি করতে হলে তারা লোকসানে পড়বেন। গুলিস্তানের খেজুর বিক্রেতা রনি বলেন, সরকার এমন এক সময় খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, যখন রমজান শুরু হয়ে গেছে। তাতে বাজারে বেঁধে দেওয়া দামের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম।
কারওয়ানবাজারের খুচরা খেজুর ব্যবসায়ী জায়েদ হোসেন বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম কমানোর মতো পরিস্থিতিতে নেই। কেউ হয়তো বেশি পরিমাণে নিলে কিছুটা কম দামে দেওয়া সম্ভব। চাহিদা না কমা পর্যন্ত খেজুরের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছি না।
গত সোমবার জারি করা খেজুরের খুচরা মূল্য নির্ধারণসংক্রান্ত স্মারকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে আমদানি করা বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানি মূল্য, আরোপিত শুল্ক, কর ও আমদানিকারকদের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে খেজুরের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজধানীর বাদামতলী পাইকারি ফলবাজারের একাধিক আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অধিকাংশ আড়ৎদার ইতোমধ্যেই সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম খেজুর কিনে ফেলেছে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে। তাই এখন যদি সরকার নির্ধারিত দামে খেজুর বিক্রি করতে যান তাহলে তাদের লোকসান হবে। তবে তারা গত বছরের মজুতকৃত সাধারণ ও নিম্নমানের মানের খেজুর ১৬০-১৭০ টাকায় ছেড়ে দিচ্ছেন