মোঃ মজিবর রহমান শেখ,
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার পৌরশহরের বন্দর কুলিক নদীর বড় ব্রীজের সামনে, মূল সড়কের দুই ধারে ময়লা আবর্জনার বিশাল লম্বা স্তূপ। ময়লা পানিতে ভাসছে পলিথিন নানা ধরনের বর্জ্য সহ আরো অনেক কিছু । এতে চারদিক ছড়িয়ে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পৌর বাজারের ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। বর্ষাকাল এলে আরো ভয়াবহ আকার ধারন করে এ দুর্গন্ধ ও পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। যদিও এই স্থানটি ময়লা ফেলানোর নির্ধারিত কোন জায়গা নয়, তবুও এখানেই পৌরশহরের সব ময়লা আবর্জনা নিয়মিত ফেলা হচ্ছে। বলার বা বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই? আবার মাঝে-মধ্যেই ওইসব আবর্জানাতে দেওয়া হয় আগুন। সে আগুনের ধোঁয়া পাশের মার্কেট ও বাসা বাড়িগুলোতে চলে যায়। যার ফলে আরো ভোগান্তিতে পড়তে হয় ব্যবসায়ী, পথচারীসহ আশে-পাশের মানুষদের। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা অপরিকল্পিতভাবে রাখা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় নাকাল অবস্থায় বসবাস করছে পৌরবাসীর। গত দু’বছর ধরে এ সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছেনা বলে অভিযোগ পৌরবাসীরসহ সমগ্র উপজেলার মানুষের। অপরিকল্পিত ও উন্মুক্তভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলায় এ রাস্তা দিয়ে চলাচল ও বসবাস করা দুরূহ হয়ে পড়ছে বলে জানান পথচারী ও স্থানীয়রা। ঐ রাস্তার ধারের রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী মো.আব্দুল হাকিম, মোটরসাইকেল পার্সের দোকানদার মো. সোহেল রানা,মোটরসাইকেল মেকার মো. মারুফ হোসেন, লেপ-তোসক তৈরির কারিগর আসিরুল ইসলাম, নরসুন্দর দোকানদার মানিক চন্দ্র শীল, কামাড়ের দোকান অমর রায়,টিন দোকান এনামুল,ট্রাক্টর ও টেংলোড়ি’র সভাপতি মোকসেদ আলী অভিযোগ করে বলেন,পৌরসভার এসব ময়লা আবর্জনা এখানে ফেলাতে আমাদের প্রচন্ড অসুবিধা হচ্ছে। দুর্গন্ধে ঠিকমতো কাস্টমার দোকানে আসতে চায়না। এবং কুকুরের উৎপাত ও আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়ায় প্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। ময়লার ভাগাড় পঁচে-সরে দুর্গন্ধে দোকানে বসে ব্যবসা-বাণিজ্য করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। মনে হয় দোকান ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাই। ময়লার গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে এভাবেই দুর্ভোগ আর কষ্টের কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। পৌরশহরের সাবেক কাউন্সিল মো.শেফা ও অমর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ময়লার দুর্গন্ধ ও কুকুরদের অত্যাচারে স্কুলে ঠিকমতো বাচ্চারা আসতে চায় না। ব্রীজের পূর্বপাশে রয়েছে উপজেলার সবচেয়ে বড় আবাদ তাকিয়া কামিল মাদ্রাসা,রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় দু-তিন হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। আর এর সিংহভাগ শিক্ষার্থীকে এই ময়লা আবর্জনার উপর দিয়ে যেতে হয় তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পৌরসভায় আরো কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে স্কুল, প্রাইভেট ও কোচিং এর জন্য এ পথ দিয়ে সকাল বিকাল যাতায়াত করতে হয়। এসময় এসব শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। সবমিলিয়ে প্রতিদিন পৌরশহর সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রায় ৫০ হাজার পথচারীদের এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরেজমিনে, কয়েকজন শিক্ষার্থী চরম অভিযোগ করে বলেন, রাস্তা পার হতে আমাদের নাকে-মুখে হাত অথবা কাপড় দিয়ে পাড় হতে হয়, তাছাড়া এসব পতিত ময়লার খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ খেতে অনেক বেওয়ারিশ কুকুর সবসময় ঘুরাফেরা করে, যা দেখে আমরা রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আবার যেদিন ঐ সব ময়লায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয় সেদিন অন্ধকারে রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। তখন রাস্তা দিয়ে যেতে অনেক সমস্যা হয়। এখন পৌরবাসীর এটি সময়ের দাবী যে, কবে এ সমস্যা থেকে তারা রেহায় পাবে। এ ব্যাপারে রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টি,এইচএ ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদ চৌধুরী বলেন, আগুনের ধোঁয়া ও আবর্জানার গন্ধ থেকে হতে পারে শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগ। তাই এই ধরনের রোগের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে এই স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার আহ্বান জানান, তিনি। পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমি ২০২১ সাল থেকে মেয়েরের দায়িত্ব পেয়েছি, রাণীশংকৈল পৌরসভার নিজস্ব কোন জমি না থাকায় ব্রীজের সামনে দু’পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ইতো মধ্যে ডাম্পিং স্টেশনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে পৌরসভার জন্য প্রজেক্ট অনুমোদন হয়েছে। ভূমি মন্ত্রনালয় থকে এ জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে না। অধিগ্রহণের অনুমতি পেলেই পৌরসভার সকল ময়লা আবর্জনা ঐ ডাম্পিং স্টেশনে স্থানান্তরিত করা হবে। এতে পৌরবাসীকে দীর্ঘদিনের এ সমস্যা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব হবে।
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন,পৌরশহরের শেষ প্রান্তে বন্দর ব্রীজের সামনে রাস্তার পাশে পৌরশহরের ব্যবহৃত ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে দুর্গন্ধ ছড়ায়ে পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, আমি মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা বলে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করবো।