• বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১০:৫৯ অপরাহ্ন
  • ইপেপার
শিরোনাম:
আমতলী পৌর যুবলীগ সভাপতিসহ তিনজন গ্রেপ্তার! সাংবিধানিক বা আইনগতভাবে এ সরকারের কোনো ভিত্তি নেই আওয়ামী লীগ যেন মিছিল করতে না পারে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসন বিএনপির পক্ষে, তাদের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়: নাহিদ ন্যাশনাল কমেডি পার্টি হয়ে যাচ্ছে এনসিপি: তাসনিম খলিল রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল না, নির্বাচন করলে আবার জিতব: সাকিব এবারও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেননি প্রধান উপদেষ্টা: মির্জা ফখরুল আমতলীতে এক বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার থানায় অভিযোগ। আমতলীতে চাদা না দেয়ায় ৬ জনকে কুপিয়ে আহত। অপারেশন ডেভিল হান্ট, আমতলীতে আ লীগ নেতা গ্রেফতার।

কানের দুল বন্ধক রেখে টিসিবির চাল-ডাল কিনলেন গোলতাজ বেগম

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ১১৬
বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৪

৭৫ বছর বয়সী গোলতাজ বেগম থাকেন চট্টগ্রাম নগরের খাজা রোডে। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি জামালখানে টিসিবির লাইনে দাঁড়ান। পণ্য পেয়েছেন বেলা দুইটার দিকে।

ভাঙা গলায় প্রথম আলোকে গোলতাজ জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ। ছেলেও বেকার। কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চলছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পেলেন। তাই ক্লান্ত। পরিবারের অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, স্বামী ঘর-বসা। বেশ কিছুদিন ধরে কাজে যেতে পারছেন না। আয় নেই। মেয়ের এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল বন্ধক রেখে কিছু টাকা পেয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে বাজার খরচ চলছে। সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে টিসিবির পণ্য কিনলেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের জামালখান মোড়ে গোলতাজ বেগমের সঙ্গে কথা হয়। এই মোড়ে তাঁর মতো টিসিবির ট্রাকের সামনে পণ্য কেনার জন্য দাঁড়ান প্রায় চার শ মানুষ। এর মধ্যে সাড়ে তিন শ মানুষ পণ্য পেয়েছেন। লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের মধ্যে নানা বয়সের ও শ্রেণি–পেশার মানুষজন ছিলেন। তাঁদেরই একজন মোহাম্মদ মুছা। পেশায় রিকশাচালক। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন শ্বাসকষ্টে।

কথা বলতে চাইলে মোহাম্মদ মুছা বলেন, প্রতিদিন তিন থেকে চারবার ইনহেলার টানতে হয় তাঁকে, খেতে হয় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ওষুধ। পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগা-পাতলা গড়নের এই রিকশাচালক সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে কাটছাঁট করেছেন ওষুধের খরচে। বললেন, ‘অনেক কষ্ট করে চলছি। শরীর কুলায় না। আয়রোজগার কম। ওষুধ কিনব কী করে জানি না।’

লাইনে দাঁড়িয়ে অন্যদের মতো ৪৭০ টাকায় ৫ কেজি চাল, ২ লিটার তেল ও ২ কেজি মসুর ডাল কেনেন মোহাম্মদ মুছা। এরপর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যা বলেছেন, তা তরজমা করলে দাঁড়ায়, রিকশা চালিয়ে কোনো দিন ৪০০, কোনো দিন ৫০০ টাকা আয় হয় তাঁর। কোনো দিন ২০০ টাকাও তুলতে পারেন না। বছর দশেক আগে গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙেছেন। এর পর থেকে সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না। ফলে দীর্ঘক্ষণ রিকশা চালানোর শক্তি নেই। কিন্তু প্রতিদিন ১৮০ টাকার ওষুধ লাগে।

ধারের টাকা নিয়ে লাইনে অন্তঃসত্ত্বা সেলিনা

দেওয়ানবাজার এলাকায় একটা ছোট সেমিপাকা ঘরে থাকেন সেলিনা আক্তার (৩৭)। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এই নারী পেশায় পোশাকশ্রমিক। আজ যখন তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন সড়কের পাশে বসে ছিলেন তিনি। এক ফাঁকে প্রথম আলোকে বললেন, কালুরঘাটের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। স্বামী দিনমজুর। পরিবারে আছে তিন ছেলেমেয়ে। টানাপোড়েনের সংসার। ৫০০ টাকা ধার করে এখানে এসেছেন তিনি। সেলিনা জানান, প্রতিবেশীর কাছে শুনেছেন, আজ টিসিবির পণ্য দিচ্ছে। ভেবেছিলেন পেঁয়াজও পাবেন। কিন্তু পেঁয়াজ নেই। তবে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় অন্যান্য পণ্য পেয়েছেন।

জামালখানে টিসিবির লাইনে সেলিনা আক্তারের মতো এমন আরও শতাধিক নারী দাঁড়িয়েছিলেন আজ। কেউ সকাল ১০টা, কেউ ১১টা থেকে তিন-চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পণ্য পেয়েছেন। এমনই একজন মোহাম্মদ আলী। তিনি এক কিলোমিটার হেঁটে এসে সকাল ১০টায় লাইনে দাঁড়ান। সুলভ মূল্যের পণ্য হাতে পান বেলা একটায়। পরে প্রথম আলোকে বলেন, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেছে।

পণ্য নিতে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফল বিক্রেতা পরিতোষ দাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাইরে থেকে এই পণ্য কিনতে ৩৯০ টাকা বেশি খরচ হতো। দোকানে মোটামুটি মানের ৫ কেজি চালের দাম ৩২৫ টাকা। সয়াবিন তেল দুই লিটার ৩২০-৩২৮ টাকা। আর মসুর ডালের দাম দুই কেজি ২২০ টাকা। দোকান থেকে কিনলে সব মিলিয়ে খরচ ৮৬০ টাকা। আর একই পরিমাণ পণ্য টিসিবি দিচ্ছে ৪৭০ টাকায়।

পরিতোষ বলেন, ফলের দামও বাড়তি। এ কারণে বিক্রিবাট্ট কম। লাভ কমে গেছে। খরচ বাদ দিয়ে আগে প্রতিদিন চার–পাঁচ শ টাকা থাকত। এখন অর্ধেক তুলতেই হিমশিম খেতে হয়। ফলে টিসিবির লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প উপায় নেই।

পণ্য না পেয়ে ফেরত গেলেন তাঁরা

মোহাম্মদ হাছান পেশায় দারোয়ান। জামালখানে ঘণ্টা দেড়েক দাঁড়িয়েও তিনি পণ্য পাননি। ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। পরে হাছান প্রথম আলোকে বলেন, চাকরির কারণে গত রাত নির্ঘুম কেটেছে। বেলা একটায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু পণ্য পাননি। পরে আবার আসতে হবে।

গৃহকর্মী শান্তা আক্তার কাজ ফেলে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনিও পাননি। পরে এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিন চারটি ঘরে কাজ করেন। দুপুরে দুটি ঘরের কাজ শেষে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।

শুধু এই দুজন নন, এ রকম আরও অর্ধশতাধিক ক্রেতা পণ্য পাননি। কারণ, প্রতিটি ট্রাকে সাড়ে তিন শ জনের জন্য চাল, ডাল ও তেলের ব্যবস্থা করেছে টিসিবি। আর জামালখানে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রায় চার শ জনের মতো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ

TikTok

জরুরি হটলাইন